ঢাকা ০১:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
উপজেলা পর্যায়ে সরকারি বিদ্যমান সেবা বিষয়ে ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত মদনে প্রাণিসম্পদের উদ্যোগে মোরগ ও ছাগলের খাদ্য বিতরণ ইটনায় সরকারি বিদ্যমান সেবা বিষয়ে অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত মদনে সংবাদ প্রকাশের পর স্কুল কর্তৃপক্ষের ঘুম ভাঙ্গল বিদ্যালয় প্রাঙ্গন দখল করে ঘর নির্মাণ করছেন শিক্ষক রাজধানীতে পার্বত্য জেলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যসমৃদ্ধ বিপনী বিতান উদ্বোধন করেন: পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী সীমান্ত সড়ক পশ্চাদপদ পার্বত্য অঞ্চলকে উন্নয়নের স্রোতধারায় একীভূত করেছে মদন উপজেলা ছাত্র কল্যাণ পরিষদের সভাপতি সায়েম সাধারণ সম্পাদক আরিফ মদনে ফের বয়রাহালা ব্রীজের এপ্রোচ দখল করে ঘর নির্মাণ মদনে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে কৃষককে হত্যার চেষ্টা

শেখের বেটি হামাক নয়া জীবন দিলো বাহে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০২:১৮:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • ১৩৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শেখের বেঠি হামাক নয়া (আমাকে নতুন) জীবন দিল বাহে (বাবা)। মুই এ্যালা শান্তিতেই ঘরোত থাকিম বাহে (আমি এখন শান্তিতেই ঘরে থাকবো বাবা)। আগত ধরলার ভাঙ্গণে মোর (আমার) বাড়ি-ঘর এ্যাক এ্যাক করি পাঁচ বার ভাংচে (ভাঙ্গছে)। বানে (বন্যার) সময় মুই (আমি) অনেক কষ্ট সহ্য করিয়া এমন কি না খেয়ে ছোয়া-পোয়া নিয়া (ছেলে-মেয়ে নিয়ে) ধরলার পাড়ত পড়িয়া আছনুং (ছিলাম)। কায়ো (কেউ) মোর খোঁজ নেয় নাই (রাখেনি)।

আজ শেখের বেটির কারণে হামার ধরলা নদীর দুই পাড়ে (তীরে) উচু বাঁধ নির্মাণ হচ্ছে। এই বাঁধ নির্মাণ হলে হামরা (আমরা) নয়া জীবন পামো বাহে (বাবা)। তাই আল্লা (আল্লাহ) যে শেখের বেটিক যুগ যুগ ধরে বাঁচে থুক (বেঁচে রাখুক)।

আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে আঞ্চলিক ভাষায় কথাগুলো বলেছেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার রামপ্রসাদ এলাকার মৃত শহর উদ্দিনের স্ত্রী বৃদ্ধা নবিজান বেওয়া (৮০)। শুধু নবিজান বেওয়া নয়, রামপ্রসাদ গ্রামের মজিবুর রহমান (৬৩), সোনাইকাজি গ্রামের জোলেকা বেওয়া (৬০) ও আমিনা বেওয়া (৭০) এর মতো ধরলার তীরবর্তী হাজারও মানুষ আনন্দিত।

ধরলা নদী সংলগ্ন সোনাইকাজি গ্রামের মৃত ফাতেউল্ল্যাহের স্ত্রী জোলেকা বেওয়া (৬০) এক সময় ৪ থেকে ৫ বিঘা জমির মালিক ছিলেন। এক সময় দাপটে চলছিল তার সংসার। ধরলা নদীর তীব্র ভাঙ্গণে বিলীন হয়েছে ভিটা চালাসহ আবাদী জমি। এখন অন্যের বাড়িতে এক মেয়ে নাতি-নাতনিকে নিয়ে সংসার। ১০ বছর আগে স্বামী মারা যায়। এক মাত্র মেয়ে লাকি। অনেক কষ্টে বিয়ে দেন। লাকির দুই সন্তান। শেষ পর্যন্ত লাকির সংসার টেকেনি। বর্তমানে জোলেকা বেওয়া নিজস্ব কোনো জায়গা না থাকায় ধরলার তীরবর্তী এলাকায় মাইদুল হকের জমিতে একটি টিনের চালা তুলে মেয়ে লাকি,নাতি-নাতনিকে নিয়ে কোনো রকমেই জীবন-যাপন করছেন।

শত কষ্টের মধ্যেও ধরলা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণসহ বাম ও ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের ৫ টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফুলবাড়ী উপজেলায় আড়াই (২.৫) কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ৫৪ কোটি ৫০ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে বাঁধটি নির্মাণ শুরু হয়। এই নির্মাণ কাজ আগামী ২০২২ সালের ২৮ জুন শেষ হলে ধরলার বামতীরে কবিমামুদ গ্রামের ৫০ টি পরিবার, রামপ্রসাদ গ্রামের ২৪৭ টি পরিবার, সোনাইকাজী গ্রামের ২৫০ টি পরিবার, প্রাণকৃষ্ণ গ্রামের ২৫০ টি, ধনীরাম গ্রামে ৩০০ টি পরিবার। ডান তীরে জোতিন্দ্র নারায়ণ দক্ষিণ প্রান্তে ১০০ টি, সোনাইকাজী ২৫০ টি,চরমেকলী ৩০০ টি পরিবার মোট দুই শেখ হাসিনার ধরলা সেতুর দুই তীরে মোট প্রায় ১ হাজার ৭৪৭ টি পরিবার আজীবন-ধরলার ভাঙ্গণ থেকে রক্ষা পাবে। সেইসঙ্গে রক্ষা পাবে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার একর জমিসহ বিভিন্ন ফসল রক্ষা পাবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তৌহিদুর রহমান জানান, ধরলা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণসহ বাম ও ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের ৫ টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উপজেলায় আড়াই (২.৫) কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ৫৪ কোটি ৫০ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে বাধঁটি নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ওই এলাকার তীড়বর্তী হাজারও মানুষ নদী ভাঙ্গণের হাত থেকে রক্ষা পাবে। সেই সঙ্গে রক্ষা পাবে ধরলার তীরবর্তী হাজার হাজার বিঘা জমিসহ ফসল এবং ধরলার দুই তীড়ের হাজারও মানুষের জীবন-মান উন্নত হবে।

ধরলা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণসহ বাম ও ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের ৫টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফুলবাড়ী উপজেলায় আড়াই (২.৫) কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ৫৪ কোটি ৫০ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে বাধঁটি নির্মাণ কাজ গত রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৪ টায় ধরলার তীরবর্তী সোনাইকাজী গ্রামে ধরলা নদীর বাম ও ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন কুড়িগ্রাম ২- আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য মো. পনির উদ্দিন আহমেদ।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী সরকার, ইউএনও মো. তৌহিদুর রহমান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ, শিমুলবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান এজাহার আলী, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মজিবর রহমান, উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মইনুল হক।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

উপজেলা পর্যায়ে সরকারি বিদ্যমান সেবা বিষয়ে ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত

শেখের বেটি হামাক নয়া জীবন দিলো বাহে

আপডেট টাইম : ০২:১৮:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শেখের বেঠি হামাক নয়া (আমাকে নতুন) জীবন দিল বাহে (বাবা)। মুই এ্যালা শান্তিতেই ঘরোত থাকিম বাহে (আমি এখন শান্তিতেই ঘরে থাকবো বাবা)। আগত ধরলার ভাঙ্গণে মোর (আমার) বাড়ি-ঘর এ্যাক এ্যাক করি পাঁচ বার ভাংচে (ভাঙ্গছে)। বানে (বন্যার) সময় মুই (আমি) অনেক কষ্ট সহ্য করিয়া এমন কি না খেয়ে ছোয়া-পোয়া নিয়া (ছেলে-মেয়ে নিয়ে) ধরলার পাড়ত পড়িয়া আছনুং (ছিলাম)। কায়ো (কেউ) মোর খোঁজ নেয় নাই (রাখেনি)।

আজ শেখের বেটির কারণে হামার ধরলা নদীর দুই পাড়ে (তীরে) উচু বাঁধ নির্মাণ হচ্ছে। এই বাঁধ নির্মাণ হলে হামরা (আমরা) নয়া জীবন পামো বাহে (বাবা)। তাই আল্লা (আল্লাহ) যে শেখের বেটিক যুগ যুগ ধরে বাঁচে থুক (বেঁচে রাখুক)।

আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে আঞ্চলিক ভাষায় কথাগুলো বলেছেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার রামপ্রসাদ এলাকার মৃত শহর উদ্দিনের স্ত্রী বৃদ্ধা নবিজান বেওয়া (৮০)। শুধু নবিজান বেওয়া নয়, রামপ্রসাদ গ্রামের মজিবুর রহমান (৬৩), সোনাইকাজি গ্রামের জোলেকা বেওয়া (৬০) ও আমিনা বেওয়া (৭০) এর মতো ধরলার তীরবর্তী হাজারও মানুষ আনন্দিত।

ধরলা নদী সংলগ্ন সোনাইকাজি গ্রামের মৃত ফাতেউল্ল্যাহের স্ত্রী জোলেকা বেওয়া (৬০) এক সময় ৪ থেকে ৫ বিঘা জমির মালিক ছিলেন। এক সময় দাপটে চলছিল তার সংসার। ধরলা নদীর তীব্র ভাঙ্গণে বিলীন হয়েছে ভিটা চালাসহ আবাদী জমি। এখন অন্যের বাড়িতে এক মেয়ে নাতি-নাতনিকে নিয়ে সংসার। ১০ বছর আগে স্বামী মারা যায়। এক মাত্র মেয়ে লাকি। অনেক কষ্টে বিয়ে দেন। লাকির দুই সন্তান। শেষ পর্যন্ত লাকির সংসার টেকেনি। বর্তমানে জোলেকা বেওয়া নিজস্ব কোনো জায়গা না থাকায় ধরলার তীরবর্তী এলাকায় মাইদুল হকের জমিতে একটি টিনের চালা তুলে মেয়ে লাকি,নাতি-নাতনিকে নিয়ে কোনো রকমেই জীবন-যাপন করছেন।

শত কষ্টের মধ্যেও ধরলা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণসহ বাম ও ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের ৫ টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফুলবাড়ী উপজেলায় আড়াই (২.৫) কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ৫৪ কোটি ৫০ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে বাঁধটি নির্মাণ শুরু হয়। এই নির্মাণ কাজ আগামী ২০২২ সালের ২৮ জুন শেষ হলে ধরলার বামতীরে কবিমামুদ গ্রামের ৫০ টি পরিবার, রামপ্রসাদ গ্রামের ২৪৭ টি পরিবার, সোনাইকাজী গ্রামের ২৫০ টি পরিবার, প্রাণকৃষ্ণ গ্রামের ২৫০ টি, ধনীরাম গ্রামে ৩০০ টি পরিবার। ডান তীরে জোতিন্দ্র নারায়ণ দক্ষিণ প্রান্তে ১০০ টি, সোনাইকাজী ২৫০ টি,চরমেকলী ৩০০ টি পরিবার মোট দুই শেখ হাসিনার ধরলা সেতুর দুই তীরে মোট প্রায় ১ হাজার ৭৪৭ টি পরিবার আজীবন-ধরলার ভাঙ্গণ থেকে রক্ষা পাবে। সেইসঙ্গে রক্ষা পাবে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার একর জমিসহ বিভিন্ন ফসল রক্ষা পাবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তৌহিদুর রহমান জানান, ধরলা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণসহ বাম ও ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের ৫ টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উপজেলায় আড়াই (২.৫) কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ৫৪ কোটি ৫০ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে বাধঁটি নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ওই এলাকার তীড়বর্তী হাজারও মানুষ নদী ভাঙ্গণের হাত থেকে রক্ষা পাবে। সেই সঙ্গে রক্ষা পাবে ধরলার তীরবর্তী হাজার হাজার বিঘা জমিসহ ফসল এবং ধরলার দুই তীড়ের হাজারও মানুষের জীবন-মান উন্নত হবে।

ধরলা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণসহ বাম ও ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের ৫টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফুলবাড়ী উপজেলায় আড়াই (২.৫) কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ৫৪ কোটি ৫০ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে বাধঁটি নির্মাণ কাজ গত রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৪ টায় ধরলার তীরবর্তী সোনাইকাজী গ্রামে ধরলা নদীর বাম ও ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন কুড়িগ্রাম ২- আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য মো. পনির উদ্দিন আহমেদ।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী সরকার, ইউএনও মো. তৌহিদুর রহমান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ, শিমুলবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান এজাহার আলী, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মজিবর রহমান, উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মইনুল হক।